সেলিম, জহির, বাবু ও কাইয়ুমসহ চার কৃষক মিলে চাষ করেছেন সূর্যমুখী। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলেও ভালো ফলন দেখে স্বপ্ন বুনছেন এলাকার অন্যান্য কৃষকরা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে বাম্পার ফলন হয়েছে সূর্যমুখীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসছেন পরিবার নিয়ে। গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর আবাদ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার।
সদর উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মাইজপাড়া গ্রামে ২ একর জমিতে কৃষক সেলিম সরকারসহ চারজন সূর্যমুখী চাষ করেছেন। দেশি ঘানি ব্যবহার করলে পরিপক্ক সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ভাঙানো যায়। এই তেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম।
বর্তমানে প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই ভিড় করছেন সেখানে। চৈত্রের শুরুতেও যেন বসন্ত হাওয়া বইছে চারপাশে।
সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সকাল বেলা পূর্বদিকে তাকিয়ে থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের সঙ্গে ঘুরতে থাকে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার দৃশ্যের সঙ্গে সূর্যমুখী ফুল তাকিয়ে থাকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম।
সুমাইয়া আক্তার স্নেহা নামে একজন বলেন, আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফুল আমার খুব ভালো লেগেছে। যিনি ক্ষেতটি চাষাবাদ করেছেন, তাকে অনেক ধন্যবাদ।
স্থানীয় কৃষক সেলিম হোসাইন বলেন, সূর্যমুখী জমির পাশেই আমার জমি। সূর্যমুখী দেখতে অনেক সুন্দর, আমার পাশের জমিতে তো অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আমি আগামীতে সূর্যমুখী চাষ করবো।
কৃষক বাবু মিয়া বলেন, এই বীজ যদি পাই আগামীতে আমরাও চাষ করবো। ২-৩ কানি জমিতে এই ফসলটা অনেক ভালো হবে।
মাদরাসা শিক্ষার্থী মাসুম সূর্যমুখী ফুলবাগান দেখতে এসে বলেন, সূর্যমুখী ফুল দেখে অনেক আনন্দ হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে বলবো আমাদের পতিত জমিতে যেন সূর্যমুখী চাষ করে।
চাষি সেলিম সরকার বলেন, সূর্যমুখী এলাকায় এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছি। আগে আমাদের বাড়িতে টুকটাক ফুল হিসেবে এক দুইটা গাছ লাগাইতাম এখন জমিতে ফসল হিসেবে চাষাবাদ করেছি। প্রথম আমার অনীহা ছিল এখন অনেক ভালো লাগছে। ফুলগুলো ফোটাতে আমাদের এলাকায় এখন একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এই ফসলে খুব একটা খরচ হয়নি, অফিস থেকে বীজ দিয়েছে সার দিয়েছে, আমরা শুধু নিড়ানি দিয়েছি। আমি এই ফসল আগামীতেও করবো। আমার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
কৃষক জহির বলেন, আমি এক কানি জমিতে এই তেল জাতীয় ফসলটা করেছি, ফসল খুবই ভালো হয়েছে। সরকার যদি এর প্রসেসিং মেশিন দেয় তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসিরুজ্জামান সুমন বলেন, মহিনন্দ ইউনিয়নে আমরা এবারই প্রথম সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এখানে ২ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। রোপা আমন কাটার পর জমিগুলো পতিত থাকতো, কোনো কিছুই আবাদ করতেন না কৃষকরা। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমি আছে এই এলাকায়। রোপা আমনের পর এই জমিগুলোতে পাট চাষ করত কিন্তু এর মধ্যবর্তী সময়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষটি করতে বলেছি।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষের মধ্যে একটি আশার আলো সঞ্চার হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এই পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনা। এখন চাষিদের মধ্যে আগ্রহ জন্মেছে। অন্যান্য তেলের তুলনায় সূর্যমুখী ফুলের তেলের চাহিদা বেশি। আমরা এই তেলজাতীয় ফসল চাষাবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।