এমনটাই প্রত্যাশিত ছিলো, তবে এতোটা দ্রুত নয়। স্বস্তির বিষয়, জল ঘোলা খুব বেশি হওয়ার আগেই অস্বস্তিকর বিষয়টির একটা সুরাহা হলো। সমঝোতা হলো প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বনাম অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর মধ্যে। সমঝোতার টেবিল থেকে উঠে দুজনেই হাসলেন, তুললেন ছবি।
এরজন্য অবশ্য খাটতে হয়েছে নাটক কেন্দ্রিক সংগঠন কর্তাদের। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হওয়ার সময় থেকেই সংগঠনগুলো এমন একটি সুরাহার আশ্বাস দিচ্ছিলেন। কারণ, প্রযোজক হিসেবে শাকিল অভিনেতা হিসেবে অপূর্ব- দুজনই নিজ নিজ অবস্থানে স্বনামধন্য এবং ইন্ডাস্ট্রির জন্য দরকারি।
অবশেষে তাই হলো, মাত্র দুদিনের মাথায় আইন-আদালতে না গড়িয়ে ‘অর্থ আত্মসাৎ’-এর মতো গুরুতর অভিযোগটির সমঝোতা হলো ট্যালিপ্যাব (টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এবং অভিনয়শিল্পী সংঘের যৌথ উদ্যোগে।
১৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর বাদী ও বিবাদীকে নিয়ে এক টেবিলে বসেন দুই সংগঠনের চারজন নেতা। তারা হলেন টেলিপ্যাবের সভাপতি মনোয়ার পাঠান ও সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ-এর সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান।
জানা গেছে, ৬ জনের দীর্ঘ বৈঠক ও পর্যালোচনা শেষে পুরো বিষয়টির সুরাহা হয় সুন্দরভাবে। সমাধান শেষে তারা ফটো সেশনেও অংশ নেন! এই ছয়জনের স্বাক্ষরসহ একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয় শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে। উল্লেখ করা হয়, শাকিল-অপূর্বর সুরাহার বিষয়টি।
লিখিত বিবৃতিতে তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অভিনয়শিল্পী জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই স্টুডিওস এর মধ্যকার সংঘটিত কাজের চুক্তি বিষয়ক যে জটিলতা তৈরি হয়েছিলো, তাতে উভয় পক্ষই প্রডিউসারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব) ও অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ-এর কাছে অভিযোগ প্রদান করেন। তারই প্রেক্ষিতে আজ (১৬ মার্চ) টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের কার্যালয়ে দু’পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় সকলের কাছে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, চুক্তি মোতাবেক উভয় পক্ষই পরিপূর্ণভাবে কার্য সম্পাদন করেননি। চুক্তি অনুযায়ী জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ৯টি নাটকে অভিনয় করেছেন। এবং বাকি নাটকগুলো উভয় পক্ষই আর না করবার বিষয়ে একমত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে অভিনয়শিল্পী অপূর্বকে প্রদান করা বাকি যে নাটক বাবদ অগ্রিম অর্থ দেয়া হয়েছে, তা উভয়পক্ষ সমন্বয় করে নেবেন।
দুই সংগঠনের লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, উদ্ভূত ঘটনা কোনোভাবেই অর্থ আত্মসাৎ নয়, এটা চুক্তি বিষয়ক জটিলতা। পুরো বিষয়টি পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমন্বয়হীনতার কারণে ঘটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে তা উভয় পক্ষের জন্যই বিব্রতকর এবং অপ্রত্যাশিত।
জানা গেছে, এমন সমাধানে স্বস্তি ফিরেছে অভিনেতা অপূর্বর মনে। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে তার ছবিযুক্ত পোস্ট দেখে সেটি অনুমেয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে
১৪ মার্চ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই-এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়, অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের খবরটি।
বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার করিম ভুঁইয়া (শাহরিয়ার শাকিল) স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব) এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের দফতরে। গত সোমবার (১১ মার্চ) এই অভিযোগ জানানো হয়েছে।
আলফা আই-এর লিখিত অভিযোগ অনুসারে, ২৪টি নাটকে অভিনয় করবেন, এই মর্মে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০২২ সালের অক্টোবরে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন অপূর্ব। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু ৯টি নাটকে কাজ করে দুই দফায় ৩৩ লাখ টাকা নিয়ে আর কাজ করেননি অভিনেতা। এমনকি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছেন বলে লেখা রয়েছে অভিযোগপত্রে।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই সব নাটকের কাজ শেষ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। এরপর চলতি বছরের ১৯ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি শুটিং করবেন বলে কথা দেন। সেই মোতাবেক সব প্রস্তুতি নেয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে না আসায় বিপাকে পড়ে আলফা আই।
গোটা বিষয় নিয়ে গত ৩ মার্চ অপূর্বর বিরুদ্ধে একটি আইনি নোটিশও পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। সাত দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হলেও সাড়া দেননি অভিনেতা। তাই আদালত পর্যন্ত যাওয়ার আগে সাংগঠনিকভাবে বিষয়টির সুরাহা করতে টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল।
প্রসঙ্গটি নিয়ে ১৪ মার্চ অপূর্বর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলা ট্রিবিউন। এ সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘আমাকে নিয়ে যে অভিযোগটি এসেছে তা মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক ও সম্মানহানিকর। আমি দীর্ঘদিনের সুপরিচিত একজন অভিনয়শিল্পী। অর্থ আত্মসাতের মতো নোংরা মিথ্যা অভিযোগে আমার মতো একজন শিল্পীকে জড়ানো হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
তবে সর্বশেষ (১৬ মার্চ) সমঝোতা বৈঠকে দুই পক্ষ সুষ্ঠু সুরাহার পর করমর্দন করলেও, আলফা আই তথা প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের করা অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি বলেই স্পষ্ট হয়েছে দুই সংগঠনের লিখিত বক্তব্যে। তবে অনেকের মতে, অভিযোগ সত্য-মিথ্যা যাই হোক, সেটি সমাধানের টেবিলে বসার আগে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া দুঃখজনক কিংবা উদ্দেশ্যমূলক।