প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৯৮ সালের বন্যায় আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বলেছিল আমরা এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবে না। দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি তখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছিলাম, আল্লাহর রহমতে একটি মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবো না। আর বিএনপির চিন্তাধারা ছিল, আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো, আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাবো।’
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু রেডক্রিসেন্টের সহায়তা নিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে সাইক্লোন শেল্টার করেছেন, তেমনি গবাদিপশু রক্ষায় বিভিন্ন স্থানে মাটির কিল্লা বানানোর নির্দেশ দেন। মানুষই এর নাম দেন ‘মুজিব কিল্লা’।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর কোনও এক সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনও সম্পদ নেই, আপনি কী দিয়ে এ দেশ গড়ে তুলবেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, “আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি-মানুষ দিয়েই এই বাংলাদেশে গড়ে তুলবো।”’
আরও পড়ুন- জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো
বঙ্গবন্ধুর উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৩ সালে উন্নত মানের গবাদিপশু আনার জন্য বঙ্গবন্ধু অস্ট্রেলিয়া থেকে অধিক উৎপাদনশীল ফ্রিজিয়ান ও জার্সি জাতের গাভি ও ষাঁড় আমদানি করেন। এবং বাংলাদেশে কৃত্রিম প্রজননের সূচনাও বঙ্গবন্ধু করে দিয়ে যান।’
প্রথম সরকারের অভিজ্ঞতা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। আর তা ছাড়া প্রাণী-পশুর খাদ্যের তো অভাবই। এই অবস্থায় আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন রিজার্ভ মানিও তেমন ছিল না। মুদ্রাস্ফীতিও বেশি ছিল। এশিয়াও খাদ্যমন্দা। ওই অবস্থায় যাত্রা শুরু করি। লক্ষ্য ছিল কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করবো। বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, “আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাইবো না, কারণ ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।” আমরা মানসম্মান নিয়েই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। সেই আদর্শে আমরা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘২০০১ সালে আমার সরকারের মেয়াদ শেষ হলে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য, ২০০৯ সালে যখন আমরা আবার ক্ষমতায় আসি, তখন দেখি ২৬ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা বরং বাংলাদেশে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যঘাটতি।’
বিএনপির দুর্বলতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংসদে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তখন বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া বসা ছিলেন। আর অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না।, তাহলে খাদ্যে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। তাদের চিন্তাধারা ছিল আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো, আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাবো।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালের মতো দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আর কখনও বাংলাদেশে হয়নি। গবাদিপশু থেকে শুরু করে মৎস্যসম্পদ নষ্ট হয়, শিল্পকারখানা অচল হয়ে পড়ে। তখন আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বলেছিল, বাংলাদেশ এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবে না। দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি তখন এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আল্লাহর রহমতে একটি মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবো না।’
তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৬ সালে বিএনপির আমলে গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ কোটি ২৩ লাখ। এখন ৭ কোটি ৯৮ লাখ। প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। তাদের আমলে পোলট্রি ছিল ১৮ কোটি ৬ লাখ, এখন তা ৫২ কোটি ৭৯ লাখ। অর্থাৎ আমরা চরা গুণ বৃদ্ধি করেছি। সেই সাথে লবণ, চা, দুধসহ সবকিছুই আমরা বৃদ্ধি করেছি। দুধ সাত গুণ বৃদ্ধি করেছি। আমরা মাংস আট গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। ডিম ঋৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে ৫৬২ কোটি ৩০ লাখ ছিল, এখন ২ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৩ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। আমরা কৃষি খাতে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি (বিএনপির চিন্তাধারা ছিল অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো: প্রধানমন্ত্রী)।’