বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা খেয়ে দেয়ে মাইক একটা লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবেন। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী, এ দেশ স্বাধীন করেছে, সেটা অপরাধ? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ায়, দেশটা আজ উন্নত করেছে, সেটাই কি অপরাধ? তারা যে গণতন্ত্রের কথা বলে—আমরা কিন্তু গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি।’
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস (১৭ মার্চ) উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
বিরোধীদের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত বলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাবে, উৎখাত করবে, নির্বাচন হতে দেবে না, মানুষ খুন করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, এখন তারা কিন্তু কোনও মানুষকে ইফতার দেয় না, নিজেরা ইফতার পার্টি খায়। ইফতার পার্টিতে গিয়েও আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়। নিজেরা ইফতার খায়, আওয়ামী লীগের গিবত গায়। আর কবে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করবে সেটাই দেখে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ঠেকাবে, ঠেকাতে পারেনি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। ওদের ভোটের চেহারার কথা তো আমাদের মনে আছে। আমরা সাধারণ মানুষকে ইফতার বিলি করি—আর তোমরা ইফতার খাও, তোমরা খেতে জানো, তোমরা হচ্ছো খাই খাই। আর আওয়ামী লীগ দেয় দেয়। এটাই হচ্ছে তফাৎ। আমরা জনগণের সঙ্গে কাজ করি, জনগণের সঙ্গে কাজ করবো। আজকে জাতির পিতা জন্ম নিয়েছেন বলে বাঙালি জাতি জাতির মর্যাদা পেয়েছে।’
আওয়ামী লীগ দিতে জানে, আর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইফতার পার্টি করবো না, এই খাবার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেবো। সারা দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বিলি করছেন।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর নিজেই (জিয়াউর রহমান) নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা বসে। এটা কোনও গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের হাত দিয়ে হয়েছে। তারা গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে? গণতন্ত্রের অর্থ বোঝে? গণতন্ত্র বানান করতে পারে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আপনারা জিজ্ঞেস করেন গণতন্ত্র বানান করতে পারি কিনা। সেটাও তারা বুঝবে না। তারা তোতা পাখির মতো বলে যাচ্ছে—গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে। এ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজকে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে বলেই কথা বলতে পারে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দেশে অনেক টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলে তারা তো দেয় নাই, একটাই টেলিভিশন ছিল, একটাই রেডিও ছিল, তারা নিজেরাই ব্যবহার করতো। আর মাত্র কয়েকটা পত্রিকা ছিল। আর আজ হাজার হাজার পত্রিকা। প্রায় অর্ধশত টেলিভিশন, রেডিও—আমাদের হয়ে গেছে। যার যার ইচ্ছামতো টকশো করছে, কথা বলে যাচ্ছে। সব কথা বলেও যদি বলে যে কথা বলতে পারি না, তাহলে কোথায় যাবো আমরা?’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনের দিন থেকে আওয়ামী লীগের ওপর যে অত্যাচার, যে নির্যাতন করছে, সে কথা মানুষ ভুলবে কী করে। জিয়াউর রহমানের দিন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার, তার আগে আইয়ুব খানের আমল থেকে নির্যাতন। এমনকি লিয়াকত আলীর সময়ও কেউ রেহাই পায়নি। আওয়ামী লীগ জন্মের পর থেকেই বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আজকে দেশে মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে—তাহলে আওয়ামী লীগের হাত থেকেই পেয়েছে। স্বাধীনতা পেয়েছে, গণতন্ত্র পেয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ডাল-ভাতের ওয়াদা করে ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর একজন এসে আলু খেতে বললো, ভাতের পরিবর্তে আলু, আলু উৎপাদন সেভাবে করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের আমলে অন্তত ভাতের কষ্ট নাই। এটা আমরা বলতে পারি। এখন জিনিসের দাম নিয়ে মানুষ বলছে, মুরগির দাম বাড়লো কেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লো কেন, চিনির দাম বাড়লো কেন, তেলের দাম বাড়লো কেন? একসময় দেশের মানুষ নুন-ভাতের কথা চিন্তা করতো। সেটুকু জোগাড় করতে পারতো না। এখন সেই অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগ পরিবর্তন করতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে খাদ্যশস্য, দানাদার শস্য আমরা চারগুণ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। আজকে আমরা ইলিশ মাছের উৎপাদন আড়াইগুণ বৃদ্ধি করেছি। আমাদের গবাদিপশু সেটাও দুইগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। মুরগি, পোল্ট্রি চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে দুধের উৎপাদন। প্রত্যেকটা জিনিসের উৎপাদন আমরা বৃদ্ধি করেছি। মাংসের দাম বেড়ে গেছে, তবে আটগুণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ওরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। কোন সাহসে চায়? ২০১৮ সালের নির্বাচনে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন খালেদা জিয়াও সুস্থ, তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, এই রমরমা অবস্থায় আসন পেয়েছিল মাত্র ৩০টা। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টা। এটা তো মনে রাখা উচিত। তাহলে কীসের আশায় আবার তত্ত্বাবধায়ক চায়?’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দীপু মনি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। বঙ্গবন্ধুর ওপর কবিতা আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী।